পরিবেশ সংরক্ষণে কাঁচাবাজারেও নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার
- By Jamini Roy --
- 01 November, 2024
পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য দেশের কাঁচাবাজারেও আজ থেকে নিষিদ্ধ হলো পলিথিন ব্যাগ। গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এই সিদ্ধান্তের কথা জানান অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি ঘোষণা দেন, ১ নভেম্বর থেকে কাঁচাবাজারে পলিথিন ও পলিপ্রোপাইলিনের ব্যাগ ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হবে। কোনো ক্রেতাকে আর এই ব্যাগ দেওয়া যাবে না।
পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আজ থেকে পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে কাঁচাবাজারে বিশেষ মনিটরিং চালু করা হয়েছে। পলিথিন উৎপাদনকারী কারখানাগুলোতেও অভিযান পরিচালিত হবে। পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার জন্য কাঁচাবাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় কঠোর নজরদারি চালানো হবে।
তিনি আরও জানান, পলিথিন নিষিদ্ধের অংশ হিসেবে গত ১ অক্টোবর থেকে সুপারশপগুলোতে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার বন্ধ করা হয়েছে। এই উদ্যোগটি বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছেন। তবে তাদের পরামর্শ, প্রথমে পলিথিন উৎপাদন ও বাজারজাতকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, যাতে বাজারে সহজেই পরিবেশবান্ধব বিকল্প পণ্যের প্রাপ্যতা নিশ্চিত হয়।
পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ কার্যক্রম তদারকিতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় একটি ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও আইন অনুবিভাগ)। কমিটি ১ নভেম্বর থেকে দেশব্যাপী পলিথিন বন্ধের অভিযান পরিচালনা করবে এবং মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় করবে। অভিযানের তথ্য প্রতিদিন বিকেলের মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি আলাদা কমিটিকে জানাতে বলা হয়েছে।
২০০২ সালে আইন করে সাধারণ পলিথিনের উৎপাদন, বিপণন ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে পরিবেশমন্ত্রী শাজাহান সিরাজ এই আইনটি প্রয়োগে সাফল্য অর্জন করেছিলেন। ২০০৬ সাল পর্যন্ত বাজারগুলো ছিল পলিথিনমুক্ত। তবে পরবর্তী সময়ে সরকারি নজরদারির অভাবে বাজারে পলিথিনের ব্যবহার আবারও বেড়ে যায়।
২০২৪ সালে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পলিথিন নিষিদ্ধের আইন কার্যকরে কঠোর হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এর অংশ হিসেবে প্রথমে সুপারশপ এবং আজ থেকে কাঁচাবাজারে পলিথিনের ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হলো।
পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পাট, কাগজ এবং কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। বর্তমানে বেশিরভাগ সুপারশপ এই পরিবেশবান্ধব ব্যাগ ব্যবহার করছে, যা পলিথিনের চেয়ে বেশি নিরাপদ। তিনি বলেন, "সুপারশপগুলোতে পলিথিন ছাড়া ব্যবসা চালাতে কোনো সমস্যা হয়নি। ফলে কাঁচাবাজারেও সমস্যা হবে না।"
পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহার বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, আইনটি কেবল বাজার পর্যায়ে নয়, পলিথিন উৎপাদন এবং বাজারজাতকারীদের বিরুদ্ধেও কার্যকর করা হবে।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান উল্লেখ করেন, সুপারশপে পলিথিনের বিকল্প ব্যবহারে ক্রেতাদের কোনো অসুবিধা হয়নি। তাই কাঁচাবাজারেও একই ধরনের কার্যক্রম বাস্তবায়িত হবে। আগামী ৩ নভেম্বর থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে পলিথিন উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অতীতের সফল প্রচেষ্টা স্মরণ করে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, "আমরা যখন পলিথিনের বিকল্পের কথা ভাবি, তখন পাটজাত দ্রব্যসহ পরিবেশবান্ধব উপকরণগুলোর ব্যবহার ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করছি।" তিনি আরও জানান, পলিথিন নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সরকার কোনো প্রকার ছাড় দেবে না।